–এম রাসেল আহমেদ
খেজুর রসের ঠিলা আগে পেড়ে আনার জন্য রাজু খুব সকালে সবার অগোচরে পুকুর ঘাটে আসে। শীতকাল ছয় ঋতুর অন্যতম এক ঋতু । এ ঋতুতে প্রচন্ড শীতের পাশা–পাশি চারদিকে কুয়াশায় ঢাকা থাকে। গ্রাম বাংলার মানুষ খুব কাজের চাপ না থাকলে কেউ বিছানা ছেড়ে উঠতে চায়না। যখন রাজু গাছে উঠে রসের ঠিলা পেড়ে নিচে নামে তখন আশে–পাশে কেউ ছিলনা, আর তার উদ্দেশ্য এটাই যে, রস কে পেড়েছে সেটা কেউ যেন না জানে। রাজুর বাবারা ৪ ভাই, তাদের অনেক জমি–জমা, কে কোথায় তাদের জমি চাষ করে সে সবের হিসাব তারা রাখেনা।
তাই খেজুর রস কে কখন পেড়ে নিয়ে যায় তার হিসাব ও থাকেনা। রাজু কিন্তু প্রত্যেক দিন রস পাড়ে না। যেই মাত্র রস পেড়ে হাটা দিবে ঠিক সেই মহুর্তে কার যেন একটা পায়ের শব্দে থেমে যায় রাজু। অপেক্ষা করে ঠিক রস চোর কিনা? একটু অপেক্ষার পর দেখা মেলে একটা মেয়ের। তার বয়স কতোই হবে ১৩ কি ১৪ বছর। তার বাম হাতে একটি জগ ও ডান হাতে ব্রাশ, ব্রাশ করতে করতে আমার কাছে আসে।
প্রথমে রাজু ভয় পেলেও পড়ে দেখে তার চাচাতো বোন মাহি। তাকে বলল এতো সকালে জগ হাতে কই যাও? সে বলে আমি রস নিতে এসেছি। রাজু বলল, আমি রস পাড়তে আসব তোমাকে কে বলল? সে বলে আমি জানি প্রতি সকালে নুরু কাকা রস পাড়ে আর আমি তাকে ভেবেই এসেছি। কোন কথা না বলে রাজু ঠিলার রস গুলো তার জগে ঢেলে দিল আর খালি ঠিলা পুকুরের জল ভরে গাছে উঠে পূর্বের স্থানে রেখে আসল। এই কান্ড দেখে তার মুখে হাসি ধরেনা।
রাজু তার নানার বাড়িতে থেকে পড়া–শুনা করে সেখানকার স্কুলে, তাই মাহির সাথে তার তেমন ভাল সম্পর্ক নেই। আজ কেন জানি তাকে তার ভাল লাগতে শুরু করল। মাহি ৭ম শ্রেনীতে পড়ে আর রাজু ১০ শ্রেনীতে, সেই কারনে রাজুর তেমন বাড়ি আসা হয়না।
নিজের চাচাতো বোন হলেও চাচার সাথে বাবার ভাল সম্পর্ক নেই। তার দাদা দাদি কে তারা ভাগ করে দিয়েছে। তাদের বাড়ি থেকে একটু দুরে পুকুর ঘাটের পাশে দাদা–দাদির থাকার ঘর। তাদের খাবার ব্যবস্থা প্রতি সন্ধায় প্রত্যেকের ঘরে, নাম লিস্ট করা আছে, রাজুর বাবা কোন সপ্তাহে সকাল বেলা খাবার দেয় তো কোন সপ্তাবে রাতে খাবার দেয়। আমি বাড়ি আসলে দাদা–দাদিকে খাবার দিতে যাই। এরকম খাবার ব্যাবস্থা তার ভাল লাগতনা । তার নিজের বাবা–মা তাদের জন্য দুই ধরনের খাবার দিত, ভাল খাবার রেখে তাদের দেওয়া হত খারাপ খাবার।
সে তার বাবাকে একদিন দেখে, এবার চাচা খাবার দিতে এসেছে , তাদের ও এই রকম অবস্থা। রাজু তার চাচির সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল ,সেই সুবাদে তখন গিয়ে বলল চাচিমা আজ কি রান্না করেছেন? চাচিমা বলল ছোট মাছ , আর রাজুকে বলল তুই কখন এসেছিস? সে বললাম কাল রাতে। সে দাদা–দাদিকে জিজ্ঞাস করল চাচা কি খাবার দিয়েছে আজ? দাদি বলল পুই শাকের ঝোল। আমি তখনি বুঝেছিলাম দাদা–দাদিকে তারা কতটা ভাল বাসে। রাজুর বাড়ি আসতে ইচ্ছা করতনা ঠিক এই কারনে।
আজ সন্ধায় সে তার দাদা–দাদির রুমে শুয়ে আছি, চাচার খাবার দেওয়ার সময় হয়েছে সেই সময় দেখে মাহি খাবার নিয়ে এসেছে। রাজুকে বলল, রাজু ভাই বাড়ি যাবেন না? একটু অবাক হলো, কারন সে কখনো তার সাথে আগে কথা বলত না। তাদের বাড়িতে তার মা অর্থাৎ চাচিমা ছাড়া তাকে কেউ দেখতে পাড়তনা। রাজু সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় সবাই আমাকে অনেক আদর করত কিন্তু দাদা–দাদির খাবার দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে ঝগড়া হয় তাতে আমাদের পরিবারে কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলেনা। আজ মাহির এ ব্যবহার রাজু কেমন জানি ভালোলাগা বাড়িয়ে দিল।
তার মাথায় একটা প্লেন কাজ করতে শুরু করে তাই তাকে বলল, চল বাড়ি যাব। সে রাজুর সাথে বাড়ি যেতে রাজি হল। তারা দুজন বাড়ির পথে হাটছে কেউ কথা বলছেনা , এমন সময় রাজুই বলল, তোমাকে একটা কথা বলব কাউকে বলবেনাতো?
সে রাজি হয়ে গেল কাউকে বলবেনা বলে। বললাম তুমিতো বাড়িতে থাক আমি নানার বাড়ি,আমাদের ঐ একটিমাত্র দাদা আর দাদি।
আমরা সবাই যে যার বাড়িতে কত সুন্দর ভাবে আরাম করে খাটে শুয়ে গায়ে গরম কাপড় দেই, আর দাদা–দাদি পুকুর ঘাটে শীতে একটি মাত্র চৌকিতে আর গরম কাপড় বলতে সেই একটি কম্বল। দাদা–দাদিও সব জমি–জমা আমাদের ছেড়ে দিয়েছে যাতে আমরা ভাল থাকি, কিন্তু বুড়ো মানুষ দুটির দিকে একবার তাকিয়ে দেখ সমস্ত কিছু আমাদের দিয়ে ও আমাদের নামে কোন অভিযোগ করেনা ।
তাই বলছি চাচাকে বলে তাদের নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলে হয়না? মাহি বলল, আমার আপনার কথায় একমত,তবে আমিতো ছোট মেয়ে এসব কি পারব? তবে আমি একটা গল্প জানি আপনি সেটা প্রয়োগ করলে কাজ হতে পারে। তার আগে বলুন আমার ভাল বন্ধু হবেন? আসলে তারাতো চাচাতো ভাই–বোন, এর চেয়ে ভাল বন্ধু আর কি হতে পারে? আসল কথা হলো এদের পরিবারে কেউ কারো সাথে কথা বললে কৈফিয়ত দিতে হতো। রাজু এক কথায় তার হাত নিজের হাতে রেখে বলে ফেলল ঠিক আছে আমি রাজি, কি গল্প বল আমি শুনব। মাহি তাকে গল্প শোনাতে থাকে………………..।
গল্প শেষ হলে রাজু বাড়ি আসে। পরদিন বাবা–মা এক সঙ্গে এমন সময় রাজু বলে বাবা আমি আজ খাবার দিতে যাব। বাবা বলল তোমাকে যেতে হবেনা আজ তোর স্কুল তুমি তারাতারি তৈরী হও। রাজু বায়না ধরে বলে আমি তো স্কুলে যাব ফিরতে ৭ দিন সময় লাগবে, তবে যাওয়ার সময় দাদা–দাদির থেকে দোয়া নিয়ে গেলে পড়া–লেখা ভাল হবে স্যার বলেছে। বাবা ভাবল ছেলেতো ঠিক কথায় বলেছে, ঠিক আছে এই নাও খাবার যাও দিয়ে এসো। বাবা ঘরের ভেতর যেতেই রাজু কান্না কাটি শুরু করে দিল। কান্নার শব্দে মা–বাবা দুজনেই ছুটে আসে আর এসে দেখে বাবা–মার দেওয়া মাটির বাসন ভেঙ্গে গেছে। বাবা বলল, তোমাকে আগেই বললাম যাওয়ার দরকার নেই, ঠিক আছে ভেঙ্গেছে আর একটি বাসনে নিয়ে যাও।
আমি বললাম আমার এই বাসনটায় লাগবে কারন তুমি যখন বুড়ো হবে তোমাকেও ঐ পুকুর ঘাটে দাদার কাছে রেখে আসব আর এই বাসনটাতে করে খাবার দিব। বাবার সাথে মা কথাটি শোনার পরে চোখের কোনে থেকে অশ্রু গাল বেয়ে পড়তে লাগে। বাবা বলে আমার ভুল হয়েছে বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি আর তোমার দাদা–দাদিকে পুকুর ঘাটে রাখবনা এক্ষুনি বাড়ি ফিরে আনছি। বাবা আর সেখানে দাড়িয়ে না থেকে বাড়ির বাইরে গেল। পরে দাদির মুখ থেকে শুনি বাবা– দাদা–দাদির পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে , দাদা আর বাড়ি ফিরে আসতে রাজি হয়নি।
বাবা মা অনেক কষ্ট করে শরীরের রক্ত পানি করে তার সন্তানদেও লালন পালন কওে আর সেই সন্তান বাবা মার সেই কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে বা অবহেলা অনাদরে রাখে। রাজু মাহির অপেক্ষা করতে লাগে, এতো ছোট একটা মেয়ে এই গল্প কোথায় পেল? রাজুর আর মাহির সাথে দেথা হলোনা কারন নানার বাড়িতে যেতে হলো ,সেখানেই তার স্কুল। বাপ–চাচার দন্দ্বে রাজুকে ওখানে থেকে পড়া শুনা করতে হয়। আগে তো রাজু আর মাহি এক সঙ্গেই স্কুলে যেতো।
সাত দিন পর রাজু আবার আমার গ্রামে ফিরে এল। এসেই চাচির কাছে ছুটে আসে মাহির সাথে কথা বলবে বলে। যে রকম খুসিতে দেখা করতে আসে সে খুসি ম্লান হয়ে যায়। মাহি কোন কথা বললনা তার মা ছিল বলে, তবে চাচি বলল তোমার নানার বাড়ির সবাই ভালো আছে? রাজু নরম ভাবে বলল হ্যা, আগে তার মা সহ চাচি
কতবার যে নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল তার মা তাকে মাঝে মাঝে বলত। মাহি চাইছিল রাজুর সাথে কথা বলতে কিন্তু তার মাকে দেখে বলেনি, তবে তার ইশারায় বুঝা গেল যে, সে তাকে পূর্বে পুকুর ঘাটে আসতে বলছে।
রাজু তার বাড়ি ফিরে আসে কিছুক্ষন যেতেই আরেক চাচাতো ভাই সুজন এসে বলে রাজু ভাই মাহি আপা তোমাকে পুকুর ঘাটে আসতে বলেছে। কথাটি শোনার পর রাজু ভীষন আনন্দিত, আর বিলম্ব না করে সেখানে চলে আসে।
এসে দেখে মাহি অপেক্ষায় আছে, তার সাথে রাজুর কথা হলো, এতো কথা হলো যে সন্ধা ঘনিয়ে এলো তবুও বাড়ী ফেরার কথা মনে ছিলনা করো। বাড়ি ফিরে আসে দুজনে । তারা কি কথা বলতো তা নাইবা বললাম তবে এটা অবশ্য অনুমান করা য়ায় যে ইতিবাচক কথায় বলেছে। তা যদি না হতো তবে রাতে ভাল ঘুম হতো। রাতে কেউ ভালো ঘুমাতে পারেনি কেন যানি বারবার দুজন দুজনার কথায় ভাবছে।
সকাল হলো, রাজু ঘুমিয়ে আছে হটাৎ করে ঘুম ভাঙ্গতেই তার মনে হলো মাহি কে দেখতে যেতে হবে। ধীরে ধীরে মাহিদের বাড়ির কাছে আসে, আশে পাশে ঘুড়া–ঘুড়ি করে যাতে সে বাড়ির বাইরে এলে দেখা হয়। অবশেষে দেখা হলোনা কারন খুব সকালে মাহি কাজল নামে এক বড় ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। মাঝে মাঝে রাজুর মনে হতে থাকে মাহির সাথে এতো ঘনিষ্ঠতা হয়ে তার খারাপ হয়েছে আর সে তার সাথে ঘনিষ্ঠ আচরন করবে না। নানার বাড়ি চলে আসে রাজু পূর্বেও ন্যায় স্কুলে যায়।
যেহেতু শীতকাল প্রতিটি স্কুলে এই সময় বনভোজনের আয়োজন হয়। রাজু বনভোজনে যায় বন্ধুদের সাথে তখন মাহির কথা তার মনে নেই। হটাৎ করে তার মামাতো বোন সুমনা তাকে প্রেম প্রস্তাব দেয় রাজু কোন কথা না ভেবেই বলে সে রাজি। বনভোজনের সময়টুকু তার খুব ভালোই কেটে যায়, তবে লেখা–পড়ার গোল্লায় যেতে থাকে এর পর থেকে। বাড়ি ফিরে আসতেই সুজনের সাথে দেখা, তার সাথে কথা হলো এক সময় সে একটা চিরকুট দিয়ে বলল এটা মাহি আপু দিয়েছে।
চিকুট টা সেখানেই খুলে পড়ে দেখে প্রেম প্রস্তাব। সুজনকে বলে তাকে পুকুর ঘাটে দেখা করতে, বাড়ি ফিরে বাবা–মার সাথে খাবার খায়। বিকাল হতে না হতেই বেড়িয়ে পড়ে মাহির উদ্দেশ্যে তখন মাহি তার দাদির কাছে গল্প করছে। রাজু আসে বেশ জমিয়ে কথা হতে থাকে মাহির সাথে। এভাবে দাদির কথা বলে , খাবার দেওয়ার নাম করে মাহি যখন তখন বাড়ির বাইরে আসতে শুরু করে, এমন কি রাতে মাঝে দুজনে গোপনে দেখা করতে আসে।
পরিবারের কেউ কখনো তাদের শ্বাসন করতে পারেনি ,কারন আগেই বলেছি কেউ কখনো কর্মকান্ড গুলো নিজ চোখে দেখতে পায়নি। তবে আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর কেউ না জানলেও মা কিন্তু হারে হারে বুঝতে পারে সন্তার কখন কি করে। একদিন খাবার সময় মা রাজুকে বলল তুমিতো বড় হয়ে গেছো আর ছেলে মানুষ নেই। রাজু তেমন কথা গুলোর মানে খুজে পায়নি, মায়ের শ্বাসন ভেবে কথাগুলো উরিয়ে দেয়।
এখন আর স্কুলে তেমন যায়না রাজু এমন কি বাড়ির বাইরে ও না। রাত গভীর হতেই দুজনে বাড়ির বাইরে চলে আসে পুরানা স্থানে। তারা কি গল্প করে সেটা নাইবা বললাম তবে আগে রাজু মাহির হাত ধরেছিল এখন আজ তাকে জড়িয়ে ধরে। অজানা এক অনুভুতি তার নেশা হয়ে দ্বাড়ায়। সব সময় সবার ভাল দিন যায়না একদিন রাজু মাহির উপর ক্ষেপেছে তার কারনটা হলো মাহি তার এক বড় আপার সাথে কাজলের সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছিল। এটা রাজুর ভালোলাগেনি কারন তাদের পরিবার কোনদিন এই সম্পর্ক মানবেনা ।
তবে শান্ত হয়ে বলে আর যেন ওদের সাথে কথা বলনা। মাহি বলল যে, সে আর কোন সম্পর্ক রাখবেনা তাদের সাথে। মেয়েদের মুখে কথা থাকেনা সেটা আবার প্রমান হলো, মাহি তার সেই বড় আপাকে বলল সে আর তাদের মাঝে নেই কারনটা তার বড় আপা বুঝে ফেলেছে। একদিন সে তার বড় আপাকে রাজুর কথা বলেছিল। মাহি সেখান থেকে ফিরে আসে বাসায়। ভালই চলছিল তার দিন কাল একদিন হটাৎ একদিন তার সাথে রাজুর দেখা হয় , মাহি খুব খুসি কারন এবার অনেকদিন সে বাড়ি আসে।
রাজু জানতে পারে যে সে কথা দিয়েছিল তা সে রাখেনি, আর এও বলে দিল যে তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না। মাহি বলছিল যে সে কথা রেখেছে। আর বলল তোমার জন্য আমি সব করতে পারি এমন কি মরে গিয়ে প্রমান করব যে আমি তোমার কথা রেখেছি এবং তোমাকেই ভার বাসি। রাজু বিশ্বাস করেনি কথাগুলো কারন তার মামাতো বোন একটা ছেলের সাথে পালিয়েছে , যে একদিন বলেছিল তাকে ভালবাসে।
মেয়েদের ভালবাসা তার কাছে ছলনা মনে হতো তাই মাহির কাথা তার বিশ্বাস হলোনা, সে দিন মাহি বাড়ি ফিরে আসে তার কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি এমন কি রাজুর সাথে পরে দেখা হলে দুর থেকে দেখছে আর মুচকি হাসছে। রাজু মনে মনে ভাবল তার মনে রং রেগেছে কিন্তু ঘন্টা দুয়েক পর তার মায়ের কান্নায় রাজু সহ তার বাড়ির সবাই মাহিদের বাড়িতে ছুটে আসে। এসেই দেখে সে কি যেন খেয়েছে বমি করছে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে এডমিট করানো হয়।
তার চিকিৎসা চলছে আর এদিকে বাবা মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। রাজু এই দৃশ্য দেখে নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারছেনা তার একটি ভুলে মাহির জীবন বিপন্ন। আবেগী মন, এই বয়সে ছেলে– মেয়েদের অতিরিক্ত হরমোনের বারাবারির ফলে এরকম ঘটনা ঘটে। রাজু বিভিন্ন স্থানে ছুটা ছুটি করছে ডাক্তারদের কাছে বার বার যাচ্ছে যেন মাহি ভাল হয়। ডাক্তার তার পেট থেকে রেট কিলার মানে ইদুর মারা বিষ বের করেছে।
তার একটু জ্ঞান ফিরেছে মা বাবা বলছে আমাদের কি অপরাধ ছিল যে এরকম একটা কান্ড করল। মাহি কোন কথা বরতে পারেনি সে শুধু রাজুর দিকে চেয়ে আছে। রাজু ভয়ে ভয়ে আছে না জানি সে তার কথা বলে দেয়। কিন্তু সে কিছুই বললনা ,তার বলার কোন ক্ষমতাও ছিলনা।
মাহি তাদের বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল, তার আগে তার বড় ভাই বোন জন্মেছিল কিন্তু তারা ছোট বেলায় মারা যায়। মাহির যদি কিছু একটা হয়ে যেত তবে তার বাবা মা কি নিয়ে বাচত এই ভাবনায় রাজু অস্থির। যে পরিমার বিষ সে খেয়েছিল তাতে তাকে বাঁচানো অসম্ভব কিন্তু খোদার অপার মহিমায় সে প্রাণে বেঁচে গেলেও ৭ দিন হাসপাতালে রেস্টে থাকতে হয়।
যে মেয়ে রাজুর মতো একটা ছেলেকে গল্প শোনাতে পাড়ে আর সেই গল্পে তার বাবা মার চোখ খুলে যেতে পাড়ে তবে সেই মেয়ে কিভাবে নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসার প্রমান দিতে যায়? আসলে ভালবাসা হলো বিশ্বাস আর বিশ্বাস যদি না থাকে তবে জীবন কেন কোন কিছুর প্রমানে সে ভালবাসার প্রমান করা যাবেনা। তবে এই ভালবাসা স্থায়ী নয়। এখানে কোন ছেলে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক নয়, তাদের যে বয়স এই বয়স ভাললাগার।
যেকোন সময় যাকে খুসি ভালবাসা যায় এই বয়সে। মাহির বাবা মা মাহি সুস্থ হওয়ার পরেও সেই দিনের ঘটনার কারন জানতে পারেনি আর রাজু আগের মতো তার সামনে আসতে ভয় পায়। অনেকে অনেক রকস মন্তব্য করেছিল তার ব্যপারে তবে কারোটা সঠিক মন্তব্য ছিলনা। ডাক্তার বলেছিল মেয়েকে সঠিক সময়দিতে তার কখন কি প্রয়োজন তা গোপন না করে মেয়ের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে। বাবা মা সব সময় যেন তাকে কাছে কাছে রাথে কখনো একা কোথাও ছাড়েনা ।
একদিন মাহি তার বাবাকে বলেছিল , বাবা আমাদের সবাই যদি এক সঙ্গে থাকতে পাড়তাম তাহলে অনেক ভাল হতো। আমার দাদা–দাদিকে ফিরিয়ে আনো বাবা । আমার জেঠু রাজুর বাবা তার ভুল বুঝতে পেড়ে তাদের ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিল কিন্তু তারা আসতে রাজি হয়নি। আমি দাদার কাছে জানতে চেয়েছি না আসার কারন, দাদা বলেছে তিনি অনেক কষ্ট করে তোমাদের বড় করেছে এই আশায় যে তোমরা মানুষের মতো মানুষ হতে কিন্ত তোমরা নিজেরা নিজেদের মতো কেউ কারো সাথে কথা বলোনা।
বাবা আমার ভুলে একটা শিক্ষা আমি পেয়েছি সেটা আপন আর পর। আমাকে কে হাসপাতলে নেওয়ার প্লেক করেছিল? কে ডাক্তার ডেকে এনেছিল আর কে সারা রাত আমার পাশে বসেছি? বাবা আমাদেও শরীরে এক রক্ত বইছে আমরা এক পরিবারের মানুষ।
বাবা আমি যদি মারা যেতাম তবে তোমাদের আর কোন সন্তার জন্মাত না, তুমিতো নিসন্তান হতে। ঐ রাজু কে আর ঐ সুজন ই বা কে? বাবা জেঠু সব সময় দাদা–দাদির কাছে আছে তিনি তার ভুল থেকে শিক্ষা পেয়েছে তুমি যদি জেঠুর সাথে এক হয়ে ছোট কাকাদের নিয়ে দাদা–দাদিকে ফিরিয়ে আনো আর সবাইকে বলে দাও যে আজ থেকে তোমরা আর জমি জমা নিয়ে ঝগড়া করবেনা দেখবে সবাই খুসি হবে। এতোদিনে সে কেন এই কথা গুলো বলেনি না বলার কারন সে ছোট মানুষ আর সবাই সবার কথা সব সময় শোনেনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোটদের থেকে শিক্ষা নিতে হয়।
আজ শিক্ষিত সমাজ যদি জেগে ওঠে তবে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা গুলো আর ঘটবেনা। জাতিতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আমাদের দেশে এখনো ৬০% লোক অশিক্ষিত , শিক্ষিত জাতি হিসাবে গড়ে উঠতে আমাদের সন্তানদের সঠিক সময়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। তাদের বন্ধুর মতো পাশে থাকতে হবে আর বিশেষ করে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তান কথনো বিপথে যায়না বা যেতে পারেনা।
তারা কখনো তাদের বাবা মাকে বোঝা মনে করেনা কারন তারা জানে পিতা মাতার পদতলে সন্তানের বেহেস্ত। পিতা মাতা যদি আল্লাহর দরবারে কোন সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করে তবে তা কখনো বিফলে যায়না। পৃথিবীতে যদি নিশ্বার্থ ভাবে কেউ ভালবাসে সে হলো পিতা মাতা। আল্লাহ তায়ালার পড়ে পিতা–মাতার ভালবাসাই হলো প্রকৃত ভালবাসা।
আমি গল্পে ভালবাসা থেকে অনাকাঙ্খিক ঘটনা বুঝাতে চেয়েছি কোন যুবক –যবতীর গোপন প্রেম বুঝাতে চাইনি। বস্তুুত এই ধরনের মেলামেশা– হারাম বলে আমি মনে করি, বিবাহিত জীবনে প্রেম ই প্রকৃত প্রেম (ফ্রান্সিস বেকন )। পরিবারের সবাই একে অপরের প্রতি ¯েœহ মততা ভালোবাসায় এক সুতাই বাধা থাকবে এটাই কামনা, কেউ বিচ্ছিন্ন থাকুক এটা কামনা করিনা।
এই গল্প এখানেই শেষ নয়…