–এম রাসেল আহমেদ,
পরপর ২৫ বছর পিছিয়ে পরা রাজনৈতিক দলটি যখন সামনে নির্বাচনে বিজয়ের পথ সুগম হয় তখন সকল তৃনমুল নেতা কর্মীদের ডেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে দলের প্রধান নেতা। সভা চলছে মনোনয়ন প্রক্রিয়ার। সভার সকল কার্যাবলীর মধ্যে সবাইকে আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে নির্বাচন ব্যয় আগের তুলনাই দ্বিগুন হবে। সবাই সেটা মাথায় রেখে যে যার বাজেট পেশ করছে কিন্তু মিঃ রফিক সরদার ততো পরিমাণ বাজেট দিতে অপারগ বিধায় সবাই চিন্তিত কারন তার মতো নেতা একটি ও নেই। ২৫ বছর যখন দলটি দেশের ৩য় স্থানে ছিল তখন সে একাই দলটিকে টেনে এনেছে এতোদুর ,সমস্ত সম্পদ দলের পেছনে খরচ করে। তার জনপ্রিয়তা সব নেতাদের চেয়ে হাজারগুন বেশী কিন্তু নির্বাচনে প্রচুর টাকা খরচ হবে এটাই বাঁকী নেতাদের ধারনা।মিঃ রফিক সরদার তার সেবা দিয়ে এতোদিন নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, তার বক্তব্য হলো তাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক জনগনের ভালবাসায় সে জয়লাভ করবে , কিন্তু দলের প্রধান নেতা অন্য কাউকে মনোনয়ন দিতে প্রস্তুত। তার ধারনা কোন একটি আসন যেন এবার মিস না হয়, সব কটি যেন তার দখলে থাকে।ঠিক সেই মহুর্তে বার বার ফেল করা নেতা তার দলবল নিয়ে সভায় চলে আসে শ্লোগান দিতে দিতে।
সবাই ভাবছে তাকে তো এখানে ডাকা করা হয়নি ,সে কেন এখানে.. এইটা ভাবতেই সে বলে, আমি প্রথমেই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের কাছে এখানে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করার জন্য, আমি ঘরে বসে থাকতে পারলাম না , দলকে ভালবাসিতো তাই দলের টানটা খুব অনুভব হচ্ছে। তবে আমি কোন মনোনয়ন চাইতে আসিনি ,আমি এসেছি দলকে একটু হেল্প করতে। সবাই অবাক! যে নিজেই নিজের হেল্প করতে পারেনা সে দলের কি হেল্প করবে? সে বলে আমি পার্টি ফান্ডে ১০০ কোটি দান করলাম।দলের প্রধান ভাবে এবার মিঃ রফিক সরদারকে বাদ দিয়ে আমরা মিঃ জাফর মিয়াকে সেই আসনে স্থলাভিশিক্ত করতে চাই ,আপনারা কি বলেন? এদের মধ্যে কয়েক জন চেচিয়ে বলে আমরা এই সিদ্ধান্ত মানিনা, আমরা মিঃ রফিক সরদারকেই চাই।দলীয় প্রধান বলে, কিন্তু আমাদের পার্টি র জন্য নির্বাচনে অনেক টাকার প্রয়োজন আছে।বাঁকীরা বলে টাকার জন্য আমরা একজন জনপ্রিয় নেতাকে হারাতে পারিনা। অনেক কথা হওয়ার পর নিজের স্বার্থে মিঃ জাফর মিয়া বলে আমি চাইনা রফিক ভাই নির্বাচন থেকে সরা দাড়াক ,তবে এটা চাইব দলের স্বার্থে সে এই পদ থেকে সাময়ীক ভাবে আমাকে স্থলাভিশিক্ত করুক। সবাই চুপ হয়ে যায় দলীয় প্রধান মিঃ জাফর মিয়াকে মনোনয়ন দিয়ে দেয়।
সভা শেষ করে বাইরে রফিক সরদার যখন তৃনমুল নেতা কর্মীদের নিয়ে আলোচনা করছে সেখানে মিঃ জাফর মিয়া এসে ইশারায় বুঝিয়ে দেয় এটাই আসলে রাজনীতি ,টাকা যার ক্ষমতা তার দখলে।কিছু দিন পর নির্বাচনে মিঃ জাফর মিয়া জয়লাভ করে কারন উপর মহলে রফিক সরদার কে বাধ্য করে তার পক্ষে প্রচার প্রচারনা করতে। নির্বাচন হলো, জয় পেল মিঃ জাফর , কিছুদিনের মধ্যেই নিবাচনী ইজতেহার ভুয়ে যায় সে। মিঃ জাফর মিয়া এখন সমাজের ত্রাস, সকল সন্ত্রসী কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে কিন্তু উপর মহল তার কোন খবর রাখেনা। তার কাছে মানুষ জিম্মি, কোন মা বোনের নিরাপত্তা নেই তার এলাকায়, বিভিন্ন ভাবে সাধারন মানুষকে ফাঁসিয়ে নেতা কর্মী দিয়ে, পুলিশ প্রশাসন দিয়ে হেনস্তা করে । কেউ তার বিরুদ্ধে গেলে তার জীবনের ইতি ঘটে, তাই কেউ এখন নিরাপদ নয়। সবাই মিঃ রফিক মিয়াকেই দোষ দেয়। এই ভাবে চলতে থাকে পলিটিক্যাল লিডারের পলিটিক্স্র।যখন সুযোগ পায় মিঃ রফিক সরদারকে ঝামেলায় ফেলাতে দিধাবোধ করেনা মিঃ জাফর। কিছুদিনের মধ্যে মিঃ রফিক সরদার এক সময় শহর ছাড়তে বাধ্য হয়। সুন্দর ভাবে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে গ্রামে চলে আসার পর কিছুদিন ভালোই কাটতে থাকে, নির্বাচনের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। তাকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা যে সে এক বর্ষিয়ান নেতা ছিল। সাধারন গ্রামের মানুষ যেভাবে বসবাস করে মিঃ রফিক সরদার তার ভিন্ন কিছু নয়। কিছুদিনে মধ্যে তার একমাত্র ছেলেকে ও নিয়ে আসে নিজ বসবাসরত গ্রামে।শহরে থাকা ছেলেটিকে গ্রামে থাকতে হয় এটা বাবা হিসাবে মেনে নিতে কষ্ট হলেও রাজনৈতিক রোষানলে পড়বে ভেবেই মিঃ রফিক তাকে কাছে কাছে রাখছে। ছেলে বেকার আর বেকারের মাথায় বিভিন্ন চিন্তা কাজ করে, কিন্তু যে চিন্তা প্রথমে করে সেটা হলো সুন্দরী মেয়েদের পেছনে লাগা। তার ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু হলোনা। একটা সুন্দরী মেয়ের পেছনে পরে থাকে একমাত্র ছেলে রাজু। মেয়েটিকে বিরক্ত করতে করতে একদিন মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেয় ,রাজুর মা অবশ্য মেয়েটিকে চিনে ফেলে ।বউ হিসাবে দেখতে চায় মনে মনে। বিয়ে ও দেওয়া হয় ছেলেকে।
মেয়েটি যেহেতু চারিত্রিক দিক দিয়ে ভাল সেহেতু মা হিসাবে নিজের ছেলের বউ কি রকম হওয়া উচিৎ সেটা তাকে চিনতে কষ্ট হবেনা।এরই মধ্যে সুন্দরী একটা মেয়ে চলে আসে গ্রামে। দেখে কারো বুঝতে কষ্ট হবেনা যে সে ধনীর আদরের দুলালী। দামি গাড়ী সাথে ড্রাইভার, গ্রামে এসে রাজুদের বাড়ির সামনে আসতেই তার বাবা দরজায় অপেক্ষায়। আগে থেকে মিঃ রফিকের শহরের বন্ধু বিলাত ফেরৎ মেয়েকে গ্রাম দেখাতে পাঠাবে তা আগে থেকেই জানিয়েছিল।বাড়িতে নতুন মেহমানের আবির্ভাব রাজুকে হয়রান করেনি, তার সাথে ভাল ভাব জমে তার।এদিকে একটা মেয়েকে বিয়ে করে রেখেছে সে। কিছুু দিন যেতেই মেয়েটি রাজুর প্রেমে পড়ে কিন্তু রাজুকে না বলে তার নিজের বাবাকে ফোনে বলে। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও মেয়ের কথা মাথায় রেখে সে তার বন্ধুকে বলে।বড়লোকের বড় বুদ্ধি অনেক আগে জানতাম ,এখন দেখছি, সে তার বন্ধুকে সরাসরি প্রস্তাব না করে রাজনৈতিক দিকে উৎসাহ দিতে থাকে।
এভাবে একদিন বলেই ফেলে ,এবার নিবার্চনে নমুনেশন ফর্ম তুলতে, আর নির্বাচনে যা ব্যায় হবে সমস্ত ব্যায়ভার সে বহন করবে। তার কথা প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু লোভ! লোভ বাপ কেউ ছাড়েনা। লোভের ধরনটা হলো তার মেয়েকে রাজুর সাথে বিয়ে দিতে হবে। অবশ্য সে জোর করেনিন কিন্তু মিঃ রফিক নিজেই বলেছে বিয়ে দিবে।নিজের মেয়েকে নিজের কাছে আনতেই রাজু সেই মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসে তখন তার বাবা ক্ষেপে যায়। সে এতোদিনে জানতোনা যে রাজু এরকম কান্ড করেছে। মেয়েটিকে মায়ের অনুমতি নিয়ে রাজু বাবার অনুমতি ছাড়াই বাড়িতে নিয়ে আসে একদিন। বাবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে কারন তার স্বপ্ন এম পি (নেতা ) হওয়া । অনেক কষ্টে রাগ চেপে রাখে কিন্তু ভেতরে ভেতরে । ছেলের বিয়ের খবরটি পরিবারের মধ্যে চেপে রাখতে বাধ্য করেছিল এবং তার স্বপ্নের কথা বলে ছেলে, বউমাকে। বউমা শশুরের স্বপ্নের কথা মাথায় রেখে নিজের বাড়িতে অনাথের মতো বসবাস করতে থাকে আর যখন সেই মেয়েটি এ বাড়িতে আসে তার সাথে স্বামীর লীলা কির্তন দেখতে থাকে। সমস্ত কিছু সহ্য করে একদিন যখন সত্য বেরিয়ে আসে তখন কিছু লোক লাগিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ছেলেকে বলেছে বন্ধুর মেয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করতে তাই তার সকল আবদার মেটাতে এখন থাইল্যান্ড। সেতো আরামেই আছে কিন্তু বাড়ির বউমাকে শশুর মশাই ছলে বলে পটিয়ে হত্যা করে। এ খবর ছেলেকে দেওয়া হলোনা কিন্তু পাপ কখনো চাপা থাকেনা। নিজের বউ তার নামে মামলা করে যার ফলে মিঃ রফিক এখন হাজতে, চারদিকে যত সন্মান অর্জন করেছিল সব নিমিশেই শেষ হয়ে গেল।